বাংলাদেশ ব্যবসা-বাণিজ্যে পশ্চাৎপদ একটি দেশ। বড় ধরনের শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে এখনও তেমন গড়ে ওঠেনি। বড় বড় শহরে বা তার আশপাশে কিছু বড় ধরনের ব্যবসায়-কোম্পানি সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠলেও গ্রাম-গঞ্জে, হাট-বাজারে এমন কি শহরের কেন্দ্রস্থলে একমালিকানা ব্যবসায়ের সংখ্যাই সর্বাধিক। অংশীদারি ব্যবসায়ের সংখ্যা সে বিচারে নেহায়েত নগণ্য: যা ৫% এর বেশি নয়। অথচ অংশীদারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ দেশের সর্বত্রই মাঝারি ধরনের ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল ।
বাংলাদেশে অংশীদারি ব্যবসায় ব্যাপকতা লাভ করতে না পারার পিছনে যে সকল কারণ বিদ্যমান তা নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. ব্যবসায়িক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাব (Lack of business knowledge and experience): আমাদের দেশে যারা নতুন ব্যবসায়ে নামে তারা এ সম্পর্কে কার্যত তেমন কোনো জ্ঞান নিয়ে আসে না । যারা ব্যবসায়ে লিপ্ত তাদেরও অধিকাংশেরই এ বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার যথেষ্ট অভাব লক্ষ্য করা যায়। এ ধরনের ব্যক্তিবর্গ ক্ষুদ্র একমালিকানা ব্যবসায় গঠন করে পরিচালনায় যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অংশীদারি ব্যবসায় গঠনে অনুরূপ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না ।
২. পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব (Lack of reciprocal trust and faith): আমাদের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাবও প্রকট। অথচ অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অংশীদারদের মধ্যকার পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। অন্যদের ওপর আস্থা না থাকার কারণে অনেকেই এরূপ ব্যবসায় পছন্দ করে না ।
৩. সততার অভাব (Lack of honesty ): আমাদের দেশের অনেকের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেনে সততার মারাত্মক অভাবও লক্ষণীয়। কথাবার্তায় আমরা যতটা সৎ কার্যক্ষেত্রে ততটা নয়। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, অংশীদারি ব্যবসায় যে চালায় পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ের সকল সম্পত্তিকে সে নিজের ভাবে এবং অন্যদের ঠকানোর হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয় ।
৪. মূলধনের সমস্যা (Problem of capital): আমাদের দেশে যারা অংশীদার হিসেবে এরূপ ব্যবসায়ে যোগদান করে তাদের প্রত্যেকেরই আর্থিক সামর্থ অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। ফলে ব্যবসায়ে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগাড় করা যায় না। অংশীদারদের নানান মত এবং সৎ ও সামর্থবান বিনিয়োগকারীর অভাবেও নতুন অংশীদার গ্রহণ করে মূলধনের সংস্থান করাও অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয় ।
৫. আইনগত সহায়তার অভাব (Lack of legal assistance): আমাদের দেশে অংশীদারি ব্যবসায় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা ও নিয়ন্ত্রণও কাম্যমানের নয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে এরূপ ব্যবসায় গঠন করা হয়। যার ফলে পরবর্তী সময়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়।
৬. প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে শিথিল নিয়ম-কানুন ( Loose rules and regulation in case of private company): আমাদের দেশে কোম্পানি আইনে এর গঠন কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও তা এখনও তেমন যথেষ্ট নয়। কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে ক্ষেত্রবিশেষে সুবিধা লাভের সুযোগ থাকায় অনেকেই অংশীদারি ব্যবসায় গড়তে উৎসাহিত হয় না।
উপরিউক্ত সমস্যাদি ছাড়াও অংশীদারি ব্যবসায়ের যেসব সাধারণ অসুবিধা; যেমন-অংশীদারদের অসীম দায়, স্বাধীন সত্তার অভাব, মালিকানা হস্তান্তরে অসুবিধা, জনআস্থার অভাব, পরিচালনাগত জটিলতা ইত্যাদি সমস্যাও এখানে রয়েছে।
Read more